বজ্র ড্রাগনের দেশ ভুটান ঘুরে আসতে পারে স্বল্প খরচে।কক্সবাজার থেকে সড়ক পথে ভুটান যেতে হলে আপনাকে প্রথমেই ভারতের ট্রানজিট ভিসা নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, ভিসার মেয়াদ মাত্র দু’সপ্তাহ। অর্থাৎ আপনি যেদিন যাবেন তার কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ দিন আগে আপনাকে ভারতীয় ভিসা সেন্টার গুলশানে আবেদন করতে হবে।
ভিসা জমা দিতে যা লাগবে-
* ভিসা ফর্ম পূরণের সময় ভিসা টাইপ ট্রানজিট ও পোর্ট বাই রোড চ্যাংরাবান্ধা/জয়গাঁও সিলেক্ট করবেন।
* সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডযুক্ত দুই ইঞ্চি বাই দুই ইঞ্চি ছবি, ফরমের সাথে আঠা দিয়ে লাগিয়ে দিতে হবে।
* ন্যাশনাল আইডি বা জন্মসনদের ফটোকপি।
* বর্তমান ঠিকানার সাম্প্রতিক বিদ্যুৎ বা গ্যাস বিল শেষ ৬ মাসের।
* চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে এনওসি (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট), ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স এবং ছাত্রছাত্রীদের আইডি কার্ডের ফটোকপি।
* ডলার এন্ড্রোসমেন্টের (২০০ ডলার) কপি অথবা ব্যাংক স্টেটমেন্টের (১৫ হাজার টাকা থাকতে হবে) কপি।
* বর্তমানে ভুটানে হোটেল রিজার্ভেশনের কাগজও দেখতে চায় ভারতীয় হাইকমিশন। তাই ভুটানে যে হোটেল বুকিং দিয়েছেন, এর কাগজও জমা দিতে হবে।
* পাসপোর্ট ও সেটার ফটোকপি (পাসপোর্টের মেয়াদ সর্বনিম্ন ৬ মাস থাকতে হবে)। আগে ইন্ডিয়ান ভিসা থাকলে তারও ফটোকপি লাগবে। পুরাতন পাসপোর্ট থাকলে সেটা জমা দিতে হবে।
* বাসে আসা যাওয়ার কনফার্ম টিকেট সেক্ষেত্রে শ্যামলী বা এসআর পরিবহন বা অন্য যেকোনো পরিবহনের বুড়িমারি বর্ডার-শিলিগুড়ি পর্যন্ত আসা যাওয়ার টিকেট। যেহেতু কনফার্ম টিকেট কাটবেন বাসের সেহেতু ভ্রমণ তারিখ ও হাইকমিশনে ভিসার আবেদন জমা দেয়ার তারিখের সঙ্গে ১০-১২ দিন গ্যাপ রাখবেন। কারণ, জমা দেওয়ার ৮ থেকে ১০ দিন পর ভিসা দেওয়া হয়। তাই বাসের টিকেটের তারিখ এর পরে হতে হবে। বাসের টিকেটের ফটোকপিও জমা দিতে হবে মূল কপির সাথে।
যেভাবে যাবেন
ট্রানজিট ভিসা নিয়ে সোজা চলে যান বুড়িমারি বর্ডারে। ঢাকা থেকে শ্যামলী, এসআর, মানিক আর নাবিলসহ কয়েকটি বাস ছাড়া হয়। ভাড়া ৮৫০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা। রাত ৮টার মধ্যে এসব বাস ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়। পরদিন সকালে অর্থাৎ ভোরে পৌঁছে যাবেন বুড়িমারি। মনে রাখবেন বাংলাদেশের এপাশের নাম বুড়িমারি আর ভারতের ওপাশের নাম চ্যাংড়াবান্ধা। বর্ডার খোলা হয় সকাল ৯টায়। এ সময়টুকু বসেই থাকতে হবে।
বাংলাদেশের ইমিগ্রেশনের কাজ সেরে চ্যাংড়াবান্ধা যেতে হবে। সেখানেও রয়েছে বেশকিছু নিয়মকানুন। চ্যাংড়াবান্ধা থেকে আপনাকে যেতে হবে জয়গাঁও বর্ডার। ট্যাক্সিতে চলে যেতে পারেন। সময় লাগবে সাড়ে তিন ঘণ্টার মতো। ট্যাক্সিতে ৪০০ রুপি মতো খরচ পড়বে জনপ্রতি। ৪ জন রিজার্ভ যেতে চাইলে লাগবে দেড় থেকে দুই হাজার রুপি। চাইলে বাসেও যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে খরচ কমে আসবে অনেকটাই।
জয়গাঁও থেকে ভারতীয় ইমিগ্রেশন পয়েন্ট টেম্পোতে লাগবে ১০ রুপি, সময় ১৫ মিনিট। ইমিগ্রেশনের কাজ সেরে আপনাকে হেঁটেই ঢুকতে হবে ভুটান। এটা ভুটানের প্রবেশ পথ, ফুন্টসোলিং। এখানেই আপনাকে অন অ্যারাইভাল ভিসা দেবে ভুটান।
এবার নিশ্চিন্তে ভুটান ঘোরার পালা। চাইলে সেদিন ফুন্টসোলিং থেকে যেতে পারেন। মোটামুটি কম খরচেই মিলবে ভালো হোটেল। এক রুম ১ থেকে দেড় হাজার টাকায় থাকতে পারবেন দু’জন। সময় বেশি না থাকলে সেদিন ফুন্টসোলিং না থেকে চলে যান পারো অথবা থিম্পুতে। ওখানেই বাসস্ট্যান্ড। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শেষ বাস। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে পারো কিংবা থিম্পু যেতে পারেন, ভাড়া নেবে ২৫০ রুপী, সময় লাগবে ৬ ঘণ্টা। তবে হাতে সময় থাকলে একদিন থেকে ছোট্ট শহর ফুন্টসোলিং ঘুরে দেখতে ভুলবেন না। সুন্দর সাজানো গোছানো শহরের পাশ দিয়ে রয়েছে চলেছে নদী।
কীভাবে যাবেন (2)
ভুটান ভ্রমণের জন্য প্রথমেই আপনার প্রয়োজন হবে ভারতীয় ট্রানজিট ভিসার, যা কিনা ঢাকার গুলশান (এবং এখন অন্যান্য শাখাতেও পাওয়া যায়, যেমন চট্টগ্রাম) শাখা থেকে আপনি করে নিতে পারেন। এরপর আপনাকে শ্যামলী বাসের টিকেট আগেই করে রাখতে হবে (বাসের টিকেট ট্রানজিট ভিসার কাগজপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে)। আরামবাগ থেকে বাস ছাড়ে রাত ৮টায় এবং কল্যাণপুর থেকে ৯টায়।
একটা কথা মনে রাখবেন, শ্যামলীর এসি বাস (কিন্তু অবস্থা খুবই করুন) যা হোক বাস বুড়িমারী সীমান্তে পৌঁছাতে সময় নেবে ১০ থেকে ১১ ঘণ্টা। তার মানে পরদিন সকাল ৭-৮টা। বুড়িমারী ইমিগ্রেশন অফিস খোলে সকাল ৯টায়, বাস আগে পৌঁছালে ‘Sometimes Abashik Hotel’-এ ফ্রেশ ও রেস্ট নিতে পারেন, জনপ্রতি ২০০ টাকা, কিন্তু চারজন হলে পড়তে পারে ৪০০ টাকা। বুড়িমারী ইমিগ্রেশন অফিসে কাজ শেষ হতে কিছুটা সময় লাগে। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। ইমিগ্রেশন অফিসের প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে পায়ে হেঁটে প্রবেশ করুন ভারতে। চ্যাংড়াবান্ধা (ভারত) ইমিগ্রেশন অফিসে কাজ শেষ হতে তেমন সময় লাগে না, তাঁরা ভালোই দ্রুত কাজ করেন। ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে ডলার/টাকা রুপিতে এক্সচেঞ্জ করে নিন (এখানেই ভালো রেট পাবেন)। ও হ্যাঁ, ডলার এক্সচেঞ্জের রসিদ নিয়ে নেবেন, পরে দরকার পড়তে পারে আপনার। ইমিগ্রেশন আর ডলার এক্সচেঞ্জের কাজ শেষ করে উঠে পড়ুন আপনার জন্য অপেক্ষারত চ্যাংড়াবান্ধা ইমিগ্রেশন অফিসের পাশে শ্যামলীর বাসটিতে। অথবা ট্যাক্সিতে করে চ্যাংড়াবান্ধা টু জয়গাঁও ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশন অফিস (ভুটান সীমান্তের কাছে) যেতে পারেন, ভাড়া পড়বে ১০০০-১৫০০ রুপির মতো।
আপনি শ্যামলী বাসেই যেতে পারেন। তারপর ময়নাগুরি নামক জায়গায় নেমে একটা লোকাল বাসে উঠে সোজা হাসিমারা। এখানে ভাড়া জনপ্রতি ৫০ রুপি। সেখান থেকেই অটোতে জয়গাঁও ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশন অফিস (ভুটান সীমান্তের কাছে) ভাড়া জনপ্রতি সাত রুপি।
ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশন অফিস থেকে Departure/এক্সিট (সব ঠিক থাকলে সময় তেমন লাগে না) সিল লাগিয়ে সোজা ভুটান।
ভুটান ইমিগ্রেশন অফিস ফুন্টশোলিং-এ অবস্থিত জাস্ট ভুটান গেটের পাশেই, এখান থেকে on-arrival ভিসা নিতে হবে, এখান থাকে শুধু থিম্পু আর পারো-এর অনুমতি পাওয়া যাবে পুনাখা, হ্যাঁ ভ্যালী, বুমথাং ও অনন্য জায়গার অনুমতি পরে থিম্পু থেকে নিতে হবে আপনাকে, মনে রাখবেন ফুন্টশোলিং ইমিগ্রেশন অফিস শুধু মাত্র বাংলাদেশি আর বিদেশি (Europe/ American etc)-দের জন্য সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে, কোনো সরকারি বন্ধ নেই। বাংলাদেশিদের ভুটানিরা খুব সম্মান করেন, কিন্তু ইমিগ্রেশন অফিসে আমাদের কে বলছিলেন কিছু বাংলাদেশিরা শুধু পাসপোর্টে সিল লাগানোর জন্য অনেক দিনের ভিসা নেয় আর এক-দুদিন পরই ফিরে আসে, এটা খুবই খারাপ। আমরাই ওদের বিশ্বাস নষ্ট করছি।
ফুন্টশোলিং ভুটান ইমিগ্রেশন অফিস থেকে on-arrival ভিসা নিয়ে আপনি চার সিটের একটি ট্যাক্সি ভাড়া করতে পারেন (১৮০০ রুপি দিয়ে), যা সোজা চলে যায় থিম্পু।
দর-দাম করে গাড়ি ভাড়া করতে হবে আপনাকে। আপনি ড্রাইভার নিতে পারেন নেপালি, ভুটানি। তারা খুব ভালো, পরবর্তীকালে আপনি যেই কদিন ভুটানে থাকবেন এদের ট্যাক্সিতে করে আপনি ঘুরতে পারেন সঙ্গে যে কদিন আপনি থাকবেন সারা দিনের জন্য ওদের গাড়িটি নিয়ে আপনি নিতে পারেন, যার মূল্য পড়তে পারে আনুমানিক ১১ হাজার রুপি। এরা খুব ভালো ইংলিশ আর হিন্দি জানে। তা ছাড়া তারা ড্রাইভার ও গাইড হিসেবে খুবই মিশুক ও বন্ধুত্বপূর্ণ।
মনে রাখবেন, ফুন্টশোলিং থেকে থিম্পু বাসেও যেতে পারবেন। শেষ বাসের সময় বিকেল ৪টা ৩০ মিনিট, ভাড়া ২৪০ রুপি, সময় লাগবে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা।